Uncategorized

গাড়ির ব্যাটারি নিয়ে কিছু জানা অজানা তথ্য

গাড়ি চলার জন্য দরকার শক্তি। শক্তি উৎপাদন করতে দরকার ইঞ্জিন। কিন্তু ইঞ্জিন চালু করার জন্য দরকার বিদ্যুৎ। অর্থাৎ বলাই যায় গাড়ি যে চলে, তার পেছনে একটি বড় ভূমিকা রাখে গাড়ির ব্যাটারি । কারন ব্যাটারি গাড়ির ইঞ্জিনে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করে। ইঞ্জিন এই শক্তিকে গতি শক্তিতে রুপান্তর করে।

গাড়ির আরো প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের মধ্যে একটি হল অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন (internal combustion engine) । ১৮৬০ সালে গাড়িতে অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিনের ব্যবহার শুরু হয়। এখন যেমন একটি সুইচ বা বাটনের মাধ্যমে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করা যায় কিন্তু, সেই সময়ে ইঞ্জিন চালু করার পদ্ধতি এত সহজ ছিলনা। তখনকার সময়ে ইঞ্জিন  চালু করার সময় আগুন নির্গত হত এবং এমন একটি হ্যান্ড ক্রাঙ্ক (লোহার হাতল) ব্যবহার করা হত, যার মাধ্যমে যথেষ্ট চাপ দিয়ে সিলিন্ডারের সেই আগুন বন্ধ করতে হত । পরবর্তীতে আগুন জ্বালানোর ক্ষেত্রে ফ্লাই হুইল ব্যবহার করতো, কিন্তু সেটি আবার অনেক সময় কাজ করতো আবার অনেক সময় কাজ করতো না, সেক্ষেত্রে আবার ইঞ্জিন চালু করার জন্য হ্যান্ড ক্রাঙ্কের ব্যবহার করতে হতো। যেটা ছিল যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।

আগের দিনের ইন্টারনাল কম্বানশন ইঞ্জিন।

গাড়িতে ব্যাটারি ব্যবহারের শুরু 

আগের দিনে চালকরা তাদের গাড়ির ইঞ্জিন বেশী সময়ের জন্য চালু রাখতে পারত না। সে যাইহোক , ১৯১১ সাল থেকে অবশ্য গাড়ির ব্যাটারি আর ইলেকট্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করা শুরু হয়।  ১৯৩০ সাল পর্যন্ত উড়োজাহাজও হ্যান্ড ক্রাঙ্কের সাহায্যে ইঞ্জিন চালু করা হত আর অন্য একজন পাখাগুলো ঘুরিয়ে দিতো, যা ছিল খুবই বিপদজনক। বৈদ্যুতিকভাবে যখন থেকে গাড়ি চালু করার প্রক্রিয়াটি শুরু হল, তারপর থেকে গাড়ির বিশ্বে আসে বড় ধরনের পরিবর্তন। তখন থেকে বড় বড় ইঞ্জিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে । যেসব বড় বড় ইঞ্জিন ইলেক্ট্রিক ব্যাটারি ছাড়া, শুধু হ্যান্ড ক্রাঙ্কের মাধ্যমে চালু করা অসম্ভব। সেসব উচ্চ ক্ষমতার গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য ব্যাটারি আবিষ্কার ছিল একটি আশীর্বাদ।

আধুনিক গাড়ির ব্যাটারি

বর্তমানে প্রায় সব ধরনের গাড়িতে পিস্টন যুক্ত অভ্যন্তরীণ ইঞ্জিন ব্যাটারি আর ইলেকট্রিক স্টার্টারের সাথে সংযুক্ত করা থাকে।  ইঞ্জিনে শক্তি সরবরাহ করার জন্য ব্যাটারিগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে খনিক সময়ের মধ্যে অনেক শক্তি করা যায়, ও এই অল্প সময়ে অধিক শক্তি ব্যবহার করে ইঞ্জিনের পিস্টনগুলোকে মিনিটে শতবার ঘুরিয়ে দিতে পারে।  এভাবে একবার ইঞ্জিন চালু হয়ে গেলে, ইলেকট্রিক স্টার্টারটি আলাদা হয়ে যায়। এতে খুব অল্প পরিমান ব্যাটারির ক্ষয় হয়। যানবাহনের অন্য সব ইলেকট্রিক সিস্টেমে শক্তির প্রয়োজন হয়। যেমন ফুয়েল, ইগিনিশন সিস্টেম, অডিও কন্ট্রোল, এসি কন্ট্রোল ইত্যাদি। গাড়ির ব্যাটারিগুলো এইসব ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেমে অনবরত ও অনেক সময়ের জন্য শক্তি সরবরাহের জন্য বানানো হয়নি। গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার পর এর সাথে জেনারেটরও চালু হয়ে যায়। এই জেনারেটর থেকে ১৩.৫-১৪.৫ বোল্টের বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় যা গাড়ির বাকি ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমকে শক্তি সরবারহ করে এবং গাড়ির ব্যাটারিকেও চার্জ আপ করে।

আধুনিক গাড়ির বহুল প্রচলিত ব্যাটারি

হাইব্রিড এবং ইলেকট্রিক্যাল গাড়ির ব্যাটারি

পরিবর্তন আসছে হাইব্রিড এবং ইলেকট্রিক্যাল গাড়ির ব্যাটারিগুলোতেও। হাইব্রিড এবং ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারিগুলো দেখতে ১২ ভোল্টের ব্যাটারির মত এত সাধারণ না। ব্যাটারিগুলো ৩০০ ভোল্টের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। তাই এই ব্যাটারিগুলোকে গাড়ির ভেতর নিরাপদ মোড়কে মুড়ে রাখা হয়। তা নাহলে ৩০০ ভোল্টেজের একটি ব্যাটারি বিস্ফোরক হয়ে মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

হাইব্রিড গাড়িগুলো যদিও ১২ ভোল্টেজের ছোট্ট ব্যাটারির সাহায্যে তার ছোটোখাটো ইলেকট্রিক্যাল কাজগুলো সেরে নিতে পারে । কিন্তু ইঞ্জিন অন করা এবং চালানোর জন্য মূল ব্যাটারি এবং ভোল্টেজ কনভার্টারের অবশ্যই প্রয়োজন হয়।  হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারিগুলো সাধারণত নিকেল মেটাল হাইড্রায়েড অথবা লিথিয়াম আয়নের হয় । আর ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারিগুলো সার্বজনীন ভাবে সবই লিথিয়াম আয়নের হয়। যা নিকেল মেটাল হাইড্রায়েডের চেয়ে বড়, গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিসরের দিক থেকে  অনেক বেশী শক্তিশালী হয়। কিন্তু তবু যখন গাড়ি থেমে থাকে তখন গাড়ির অন্যান্য কাজের জন্য ১২ ভোল্টেজের ব্যাটারি গাড়িতে ব্যবহার করাই যায়। আবার যখন গাড়িটি চলে তখন পাওয়ার কনভার্টারের মাধ্যমে ছোট ব্যাটারিটি রিচার্জ করা যায়।

গাড়ি ব্যাটারি বিষয়ক গবেষণা এখন অন্য একটি পর্যায়ে চলে গিয়েছে। লিথিয়াম আয়রন ফসফেট এবং লিথিয়াম সালফার ডাই অক্সাইড যা হচ্ছে সুপার ক্যাপাসিটর প্রযুক্তি নামে পরিচিত এবং যার মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ বা চার্জের নির্গমন তাৎক্ষণিক ভাবে করা হয় ।

Source: https://cutt.ly/jTqAWvB

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *